Article 12 রাষ্ট্র ভূত

 

যেমন হেডিংটি তে স্ট্রাকচারালিজেমের প্রভাব জাপটে ধরেছে, সেই রকম ই সঙ্গতিপূর্ণ ভাবে গুপি, বাঘার সাথে আরো একজন জড়িয়ে আছেন। ভূতের রাজা , the maker । যার কল্যাণে গ্রাম তাড়ানো গায়ক বাদকেরাও যশবান হয়ে উঠে । রাজাদেরও টাইট দিতে পারে । বাস্তবেও এর খুব একটা ফারাক হয় না। । আজকের রাষ্ট্র যে অতিতের রাজা বাদশার ভূত তাতে আর সন্দেহ কি । বিনা যোগ্যতায় , এই রাষ্ট্র ভূতের বদান্যতায় অভিষেকেই রাজা । তাই ডেমোক্রেটিক সিড়ি দিয়ে ক্ষমতা পিড়িতে বসতে চায় সবাই। ক্ষমতা য় বসে কি রাষ্ট্র কে দেখা যায়? রাষ্ট্রের ধামাধরা কুবুদ্ধিজীবীরা পিপল্স-নেশন’র পর্দা নিয়ে হাজির। তাহলে কোন সূত্রে পাওয়া যায় নেশন রাষ্ট্রের সমাধান।‘ আসলে অধিকারের পরিধির সীমাবদ্ধতা কে প্রশ্ন আপাত ভাবে নয়। খোঁজ তাদের ঠিকানায়, যাদের লক্ষ্ণণ লাইন এর সীমানা নেই।
এ্যারিস্টটলের মতে, “স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবনের জন্য কতিপয় পরিবার ও গ্রামের সংগঠনে গঠিত সংগঠনই রাষ্ট্র।” আবার কনফিউজড গান্ধী মতে জনগণ হল মূল, রাষ্ট্র হল ফল (“if the roots are sweet, the fruits are bound to be sweet”)। আবার অন্য জায়গায় বলে বসেন The State represents violence in a concentrated and organised form’। আসলে “রবীন্দ্রনাথের রাজত্বের দাবি” সেখানে অনেক স্পষ্ট !!! তাই রূপান্তরবাদী অনুশীলনে রাষ্ট্রের ভাবনাটাকে আরো গোছানো প্রয়োজন । তবে হব্স, লক, রুশোর সামাজিক চুক্তির সাথে সহমত পোষণ করছিনা । কারণ ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। এটা মার্ক্স এর রাষ্ট্র বিলোপের তত্ত্বের হাত ছাড়িয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা । পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রের বিবর্তন ধারণাকেও পাথেয় করছি না। কারণ তাতে violence কে শাশ্বত প্রমাণ করা যায় । আর যে কোন বড় স্যোশাল অর্ডারে রাষ্ট্রের খোঁজ সঠিক না, কারণ সমস্ত বড়ো স্যোশাল অর্ডার রাষ্ট্র হয়ে ওঠেনি।
আসলে লেনিনের রাষ্ট্রের কে হাতিয়ার বলাটা ছিল এক টুকরো ধারণা । আসলে , চোখ বন্ধ করে রাষ্ট্রের চিন্তা করলে মননে সামরিক বাহিনীর ছবি ভেসে ওঠে । কিন্তু এই সেনাবাহিনীর প্রতি সমাজে একটা সম্মান প্রচলিত আছে , সেটা অনুধাবনের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। এটাই কানাইকুমাররা বোঝেন না।
তাই , রাষ্ট্র শুধুমাত্র একটি আধিপত্যবাদী force বা ক্ষমতা না। এর পাশাপাশি এটি নিজের শক্তি প্রয়োগকে সামাজিক বৈধতা প্রদান করে বিভিন্ন অ্যাপারেটাসের মধ্যে দিয়ে এবং আইনের শাসনের মাধ্যমে নিজের শক্তির যথার্থতারও দাবি করে । রাষ্ট্রের বল প্রয়োগে আইনের শাসনের ভূমিকাটাই সবচেয়ে বড়। আর এর সাথে থাকে রাষ্ট্রের ভাবাদর্শের প্রচলিত ধারণা। যা ক্রমশ সমাজের ধারণাতে পরিবর্তিত হয়। এই ধারনা গড়ে তোলার কারিগরি বিশ্বেবিদ্যালয়, মিডিয়া এবং রাজনৈতিক দল । যারা নৈতিক নেতৃত্বে গড়ে ওঠার ভান করে । আরও ভেঙে বললে রাষ্ট্রের আইনের শাসনের নামে আপেক্ষিক স্বায়ত্তশাসনের ধরন আছে, যা দিয়ে সে বৈধতার বাতাবরণকে সামাজিক ভাবে গোছানোর কাজে লাগানো হয় ।
রাষ্ট্রের মাঝে যে কেন্দ্রীয় ক্ষমতা আছে, তা
আগে ধর্মের থেকে এই বৈধতা নিতো । এখন সেটাই জনগণের ভোটে অংশ গ্রহণ থেকে নেয়।
আর ক্ষমতা মানে ” প্রফেশনালি কাউকে অধীন ” রাখার শক্তি। অনেকাংশে শক্তি প্রয়োগ না করেই , ভয়ের ভয়াবহতার উপর আস্থা রাখে এই শক্তি । আসলে ভয় আমাদের আদিম অনুভূতি। এই ভয় থেকেই শক্তি এবং ভয়কেই ব্যবহার করে শক্তি। অর্থাৎ কাঠের কুঠারে কাঠ কাটা ।
এখন প্রশ্ন হলো রাষ্ট্র কি natural বা প্রাকৃতিক ?
প্রথমতঃ প্রকৃতির মধ্যে থাকে সহযোগিতা ।
খাদ্য সংগ্রহ করা violence নয়। খাদ্য গ্রহণ করার পরে বাকিটা অন্যান্য প্রাণীর জন্য ছেড়ে দেয় । এটা আসলে ইকো সিস্টেম বজায় রাখার মাধ্যমও বটে। কিন্তু শ্রমিক নিয়ন্ত্রণ আর শোষণের যে প্রতিযোগিতা থাকে, তার থেকেই artificial violence বা কৃত্রিম সন্ত্রাসের জন্ম দেয়।
“ঝাঁকবদ্ধ জীব” দের মধ্যে নেতা আছে কিন্তু তাতে রাজনীতির ক্ষমতা নেই। মানুষ মানুষ এ যোগাযোগের নাম সমাজ । তাই এই সমাজ স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক কিন্তু তার উপরে চেপ বসা রাষ্ট্র প্রাকৃতিক নয় ।।
কৃত্রিমতাতে আদিম কে ? রাষ্ট্র না culture ? Archaic Culture এর সামনে রাষ্ট্র তো নগন্য।
তাই হিন্দু কালচারকে সাথে রাখতে চায় রাষ্ট্র। হিন্দু কালচারকে আর রাষ্ট্র কালচার বানাতে চায় । সংবিধানে গরু হত্যার বিরোধী আইনের প্রস্তাব করে। তাইতো গণপরিষদে নতুন সংবিধান রচনার, মূল কপিতে শান্তিনিকেতনের বিখ্যাত শিল্পী নন্দলাল বোসকে দিয়ে তৃতীয় অংশে, [যা আমাদের মৌলিক অধিকারের বর্ণনা দেয় ]
রাম, সীতা এবং লক্ষ্মণ ছবি আঁকানো হয়েছিল । এই অঙ্কনটি হিন্দু কালচারের প্রতি তৈল মর্দন ছাড়া আর কি ?

আসলে রাষ্ট্র, ভূতের মতো ওজনেরই একটি বিমূর্তসংস্থা । ভূতের ভয়ের মতো, যার শক্তির প্রয়োগ না থাকলে রাজ রোষের ভয় আছে । বিভিন্ন উপকরণ বা এজেন্সির মধ্যে দিয়ে কাজ করে। এ যেন অদৃশ্য গরাদের জেলখানা। যে দিকে ই যাও seperation of power র মধ্যে দিয়ে ঘুরে আগের জায়গায় এসে পড়বে ।

এই রাষ্ট্রের খোঁজ করার জন্য ই আর্টিকেল ১২ । ভারতের সংবিধানের 12 অনুচ্ছেদ বলে, ‘রাষ্ট্র’ শব্দটি ভারতের ভূখণ্ডের মধ্যেই খাটবে এবং
ভারত সরকারের নিম্নলিখিত কর্তৃপক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে-
কেন্দ্রীয় সরকার
সংসদ
রাজ্য সরকার
রাজ্যের আইনসভা
সমস্ত স্থানীয় কর্তৃপক্ষ
এবং
অন্যান্য কর্তৃপক্ষ।
এটা রাষ্ট্রের ধারণা না কি রাষ্ট্রের হায়ারার্কি বা কর্তৃত্ব-ক্রমতন্ত্র প্রদর্শন । অর্থাৎ এরা কেউ রাজা নয় । এখানে রাজার কাপড় আছে রাজা নেই।
প্রথমে সংবিধানের খসড়া তে আর্টিকেলটি 7 নম্বর হিসাবে ছিল । তখন এটির উদ্দেশ্যে ডঃ আম্বেদকর বলতে গিয়ে অথরিটি’ শব্দের নামে তিনি রাষ্ট্রের খোঁজার উপায় বাতলে ছিলেন । হালকা ভাবে বললে আইন বা নিয়ম বানাতে পারেন এমন প্রতিটি ক্ষমতাকে ই রাষ্ট্র হিসেবে ধরা যেতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ভুতের বদলে ভুতের পদক্ষেপ থুড়ি রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপের কথা বলেছে । সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনীর ধারা ১ ।
এই ধারায় বলা হয়েছে অ্যামেরিকান রাষ্ট্র তার আইনসভা, executive ও বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা কাজ করে।
সব শেষে মনে হয় এ যেন অন্ধের হাতি দেখা । তিন স্তম্ভের এই রাষ্ট্র যে গনতন্ত্রের দাবি করে, তা কেন শুধু মাত্র আইনসভাতে স্বীমাবদ্ধ ?? চিলির উদাহরণ আছে। তাই বাকি দুই স্তম্ভে গনতন্ত্রের হাওয়া প্রবেশ করতে না দিলে, রাষ্ট্র তুমি রাজার ভূত ছাড়া কিছু না।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *